Sunday 20 July 2014

ইসরালি সৈন্য আটক : বদলে যাচ্ছে গাজা যুদ্ধের দৃশ্যপট

ইসরালি সৈন্য আটক : বদলে যাচ্ছে গাজা যুদ্ধের দৃশ্যপট

 

 [গাজার যুদ্ধে ইসরাইলের ১৮ জন সৈন্য নিহত হয়েছে। আটক হয়েছে ১জন সৈন্য। স্বজন হারানোর দু:খ , ভয়াল পরিবেশের মধ্যে গাজা ও পশ্চিম তীরে চলছে উৎসব। তেলআবিব ও জেরুজালেমে হতাশা। গাজা যুদ্ধ নিয়মিত বিশ্লেষন থাকছে অন্যদিগন্তে। আসছে খালেদ মিশালের সাক্ষাতকার।]

ইসরাইল যখন গাজায় বেসামরিক লোকজনকে হত্যা করছে তখন দেশটির সেনাবাহিনী হামাসের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। গাজায় স্থল অভিযান শুরু করার পর ইসরাইলি সেনাবাহিনীর হিসাবে এ পর্যন্ত ১৮জন সৈন্য নিহত হয়েছে। এরমধ্যে গতকালের অভিযানে মারা গেছে ১৩ জন। অপরদিকে বেসমারিক লোকজনের ওপর হামলায় গাজায় ৪শর বেশি ফিলিস্থিনি নিহত হয়। এরমধ্যে দেড় শতাধিক শিশু। আল সুজাইয়া এলাকায় স্থল অভিযানে নির্বিচারে হামলায় শতাধিক নারী ও শিশু মারা যায়। রাস্তায় লাশ পড়ে থাকার হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখা যায়।

এই যুদ্ধের মধ্যেও হামাস বড় ধরনের সাফল্য অর্জন করেছে। একজন ইসরাইলি সৈন্যকে আটকের দাবি করেছে হামাসের সামরিক শাখ আল কাসাম ব্রিগেড। ইসরাইলি সৈন্য আটকের খবর প্রচারের পর যুদ্ধ বিধ্বস্ত গাজা ও পশ্চিম তীরে উৎসবে রাস্তায় নেমে আসে ফিলিস্তিনিরা। কাতারের রাজধানী দোহায় অবস্থানরত হামাসের শীর্ষ কর্মকর্তারা ইসরাইলি সৈন্য আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। আল জাজিরাসহ আরব টেলিভিশনগুলোতে হামাসের সৈন্য আটকের ঘোষনার একটি অডিও বার্তা প্রকাশ করা হয়। ইসরাইলি সৈন্য আটকের বিষয়টি গাজা আক্রমনে ইসরাইলের বড় ধরনের পরাজয় হিসাবে দেখা হচ্ছে। এর আগে ২০০৬ সালে গিলাত শালিত নামে একজন ইসারইলি সৈন্যকে আটক করেছিলো আল কাসাম ব্রিগেড। তার মুক্তির বিনিময়ে ইসরাইলি কারাগারে আটক হামাসের শীর্ষনেতাসহ প্রায় একহাজারের মতো ফিলিস্তিনি বন্দীকে কারামুক্ত করা হয়। এই অভিযানের আগে অনেক হামাস নেতাকে আটক করেছে ইসরাইল।

গাজার যুদ্ধে ইসরাইলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনায় চাপের মুখে পড়েছে নেতানিয়াহু সরকার। ইতোমধ্যে বেসামরিক নাগরিক হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়েছে। বিশ্বজুড়ে প্রতিদিন বিক্ষোভ সমাবেশ হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ইসরাইলি সৈন্য আটক ও ১৮ জন সৈন্য নিহত হওয়ার ঘটনায় সাধারন ইসরাইলিদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছ। ইসরাইলি সব নাগরিকের সৈন্যবাহিনীতে চাকুরি করা বাধ্যতামুলক। গাজায় স্থল অভিযানে যেসব সেনাসদস্য অংশ নিয়েছে সেসব পরিবারের মধ্যে এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে।

ইসরাইল গাজায় স্থল অভিযান চালিয়ে গেলে আরো ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। ইসরাইল বলছে গাজায় যেসব টানেল রয়েছে সেগুলো ধ্বংস করা এই অভিযানের লক্ষ। কিন্তু লক্ষ অর্জনে খুব কমই সাফল্য অর্জন করেছে। বেসামরিক নাগরিক বিশেষ করে নারী শিশুদের তারা হত্যা করেছে। হামাস বলছে বেসামরিক লোক হত্যাছাড়া এই অভিযানে তারা কোনো সাফল্য পাবে না। বিশ্লেষকরা বলছেন অন্য যেকোনা সময়ের চেয়ে হামাসের সামরিক শাখা অনেক বেশি প্রস্তুতিমুলক ছিলো। তারা স্থল অভিযানের জন্য অপেক্ষা করছিলো। আর ইসরাইলি সেনাবাহিনীর জন্য এই অভিযান ফাদ হিসাবে দেখা দিয়েছে। ফিলিস্তিন সরকারের মুখ্য আলোচক সায়েত এরাকাত এই অভিযান সর্ম্পকে বলেন ইসরাইলের সামরিক অভিযান পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। তারা শুধু বেসামরিক লোককে হত্যা করা ছাড়া আর কোনো সাফল্য পাবে না।
এদিকে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আলোচনার জন্য জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব বান কি মুন এখন দোহায় রয়েছেন। কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতরি বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ও হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান খালেদ মিশালও এখন দোহায় রয়েছে। ফিলিস্তিন যুদ্ধের নতুন মোড় এই আলোচনায় ফল বয়ে আনতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন ইসরাইলের ভেতর থেকে যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ বাড়তে থাকবে। নেতিনিয়াহু সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরো বিপর্যয়কর হতে পারে। কারন এই যুদ্ধে পরাজয়ের কারনে সরকারের পতন ঘটতে পারে।

No comments:

Post a Comment