মেহেদি ব্যবহারে সাবধান
মেহেদি ব্যবহারে সাবধান
মেহেদি ব্যবহারে সাবধান
এমন পরিণতির হাত থেকে বাঁচতে সরাসরি মেহেদি পাতা বা পরীক্ষিত মেহেদি টিউব ব্যবহারের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
ঢাকার একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সারিকা তাঁর মায়ের সঙ্গে এলেন চর্ম রোগের ডাক্তারের চেম্বারে। চোখ দিয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় পানি ঝরছে। ডাক্তার জানতে চাইলেন- ‘কী সমস্যা?’ সারিকা দুই হাত তুলে ধরেন ডাক্তারের সামনের টেবিলের ওপর। হাত দেখে ডাক্তার আঁৎকে উঠলেন- ‘এ কী সর্বনাশ!’ সারিকা হাউমাউ করে কেঁদে ফেললেন। একটু দম নিয়ে বললেন, ‘আমার হাত দুটো বুঝি শেষ হয়ে গেল। প্লিজ কিছু একটা করুন।’
সারিকার দুই হাতের মেহেদি রঙের সুন্দর আল্পনা ছাপিয়ে বীভৎস হয়ে উঠেছে জলফোসকা। পাশ থেকে মা বললেন, ‘মেয়েটি আমার ছোট সময় থেকেও সাজুগুজু করতে খুব পছন্দ করে। কিন্তু মেহেদির সাজ খুব একটা পছন্দ করত না। এবার আমি নিজেই ওকে উৎসাহ দিয়েছি হাত মেহেদির রঙে সাজাতে।
আমি নিজেই ওর সঙ্গে গিয়ে টেলিভিশনে নিত্য বিজ্ঞাপন দেয় এমন একটি পরিচিত ব্র্যান্ডের টিউব মেহেদি কিনে দিই ধানমণ্ডির একটি মার্কেট থেকে। রাতে বসে বসে আমি নিজে ওর হাত সাজিয়ে দিয়েছি। কিছুক্ষণ পরেই মেয়ে আমার বলতে শুরু করে হাত জ্বলেপুড়ে যাওয়ার কথা। সঙ্গে সঙ্গে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে হাত ধুয়ে দিই। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই ওর দুই হাতের নকশাজুড়ে ছোট-বড় ফোসকা ওঠে। সকাল নাগাদ কয়েকটি ফোসকা ফেটে যায়। এতে যন্ত্রণা আরো বাড়ে। মেয়ে বাসায় চিৎকার করে কান্নাকাটি করেছে।’ ঘটনার বর্ণনা শুনে ডাক্তার তাঁকে দুই-তিনটি খাওয়ার ওষুধ ও একটি মলম লাগানোর পরামর্শ দিয়ে বিদায় করেন।
বেসরকারি একটি উন্নয়ন সংস্থার কর্মী নুসরাত জাহানেরও এক হাত ঝলসে যায় বাজার থেকে কেনা টিউব মেহেদি হাতে লাগিয়ে। তাঁর হাতের ঘা শুকাতে বেশ সময় লেগে যায়। এর পরও দাগ রয়ে গেছে।
নুসরাত বলেন, ‘সুন্দর দেখানোর জন্য হাতে সুন্দর করে নকশা করে মেহেদির রং দিয়েছিলাম। কিন্তু ওই মেহেদির বিষাক্ত কেমিক্যালে আমার হাতটাই নষ্ট হয়ে গেল। এখন আমি সব সময় ফুল হাতার জামা পরে কিংবা রুমাল দিয়ে হাত ঢেকে রাখতে হচ্ছে।’
কেবল সারিকা বা নুসরাত একা নন, বাজারে বিক্রি করা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মেহেদি থেকে অনেকেরই হাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অসহায় হয়ে চিকিৎসকদের কাছে ছুটে আসছেন এমন অনেকেই।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, মাঝেমধ্যেই মেহেদিতে হাত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া রোগী আসে চিকিৎসা নিতে। যাদের বেশির ভাগই অল্প বয়সী মেয়ে। তাদের কেস স্ট্যাডি নিয়ে জানা যায়, বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মেহেদি ব্যবহারের ফলে এমনটা হয়েছে।
ওই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, ‘সরাসরি মেহেদি গাছ থেকে পাতা সংগ্রহ করে যারা নিজেরা মেহেদি ব্যবহার করে তাদের এ ধরনের ক্ষতির ঝুঁকি থাকে না। কিন্তু বাজারে নকল ও ভেজাল অনেক টিউব মেহেদি বেচা-কেনা হয়। এসবের মধ্যে অনেক ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক মেহেদির লেশমাত্র থাকে না, বরং বিষাক্ত নানা রাসায়নিক রং দিয়ে এই মেহেদি তৈরি করে বাজারজাত করা হয়। এগুলোর মধ্যে এসিড জাতীয় ক্ষতিকর উপাদান থাকে, যা মানুষের ত্বক ঝলসে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। তবে বাজারের সব মেহেদি ব্র্যান্ডই যে বিষাক্ত বা ক্ষতিকর তা ঢালাওভাবে বলা যাবে না। গত বৃহস্পতিবার ঢাকার কাছে কেরানীগঞ্জে একটি ভেজাল ও নকল মেহেদি তৈরির কারখানায় অভিযান চালায় র্যাবের বিশেষ টিম। এ সময় ওই কারখানা থেকে পাকিস্তানি হেনা হারবাল মেহেদি তৈরির নানা কেমিক্যাল ও সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
র্যাব সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার পাশা জানান, কেরানীগঞ্জের ওই কম্পানিতে এগুলো তৈরি হলেও প্যাকেটের গায়ে হিন্দি ও উর্দু লেখা লিখে তা বাজারজাত করা হতো। এসব মেহেদিতে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় তা পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।
ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, একবারে পুরো হাত বা নির্দিষ্ট নকশা ধরে মেহেদি না লাগিয়ে শুরুতে সামান্য একটু মেহেদি কোথাও লাগিয়ে স্কিন টেস্ট করা যেতে পারে। যদিও এ ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখতে না-ও পাওয়া যেতে পারে। অনেকের স্কিনে তাৎক্ষণিক ক্ষতির লক্ষ্মণ দেখা দিলেও, অনেকেরই ধীরে ধীরে কিংবা কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিন পরেও ক্ষতি হতে পারে। তাই মেহেদি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক ও সচেতন থাকা খুবই জরুরি। এ ছাড়া যাদের ত্বকে এলার্জির সমস্যা আছে তাদেরও মেহেদি পরিহার করা উচিত।
এমন পরিণতির হাত থেকে বাঁচতে সরাসরি মেহেদি পাতা বা পরীক্ষিত মেহেদি টিউব ব্যবহারের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।ছবি : সংগৃহীত
অঅ-অ+
ঢাকার
একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সারিকা তাঁর মায়ের সঙ্গে এলেন চর্ম
রোগের ডাক্তারের চেম্বারে। চোখ দিয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় পানি ঝরছে। ডাক্তার
জানতে চাইলেন- ‘কী সমস্যা?’ সারিকা দুই হাত তুলে ধরেন ডাক্তারের সামনের
টেবিলের ওপর। হাত দেখে ডাক্তার আঁৎকে উঠলেন- ‘এ কী সর্বনাশ!’ সারিকা হাউমাউ
করে কেঁদে ফেললেন। একটু দম নিয়ে বললেন, ‘আমার হাত দুটো বুঝি শেষ হয়ে গেল।
প্লিজ কিছু একটা করুন।’
সারিকার দুই হাতের মেহেদি রঙের সুন্দর
আল্পনা ছাপিয়ে বীভৎস হয়ে উঠেছে জলফোসকা। পাশ থেকে মা বললেন, ‘মেয়েটি আমার
ছোট সময় থেকেও সাজুগুজু করতে খুব পছন্দ করে। কিন্তু মেহেদির সাজ খুব একটা
পছন্দ করত না। এবার আমি নিজেই ওকে উৎসাহ দিয়েছি হাত মেহেদির রঙে সাজাতে।
আমি
নিজেই ওর সঙ্গে গিয়ে টেলিভিশনে নিত্য বিজ্ঞাপন দেয় এমন একটি পরিচিত
ব্র্যান্ডের টিউব মেহেদি কিনে দিই ধানমণ্ডির একটি মার্কেট থেকে। রাতে বসে
বসে আমি নিজে ওর হাত সাজিয়ে দিয়েছি। কিছুক্ষণ পরেই মেয়ে আমার বলতে শুরু করে
হাত জ্বলেপুড়ে যাওয়ার কথা। সঙ্গে সঙ্গে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে হাত ধুয়ে দিই।
ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই ওর দুই হাতের নকশাজুড়ে ছোট-বড় ফোসকা ওঠে। সকাল নাগাদ
কয়েকটি ফোসকা ফেটে যায়। এতে যন্ত্রণা আরো বাড়ে। মেয়ে বাসায় চিৎকার করে
কান্নাকাটি করেছে।’ ঘটনার বর্ণনা শুনে ডাক্তার তাঁকে দুই-তিনটি খাওয়ার ওষুধ
ও একটি মলম লাগানোর পরামর্শ দিয়ে বিদায় করেন।
বেসরকারি একটি
উন্নয়ন সংস্থার কর্মী নুসরাত জাহানেরও এক হাত ঝলসে যায় বাজার থেকে কেনা
টিউব মেহেদি হাতে লাগিয়ে। তাঁর হাতের ঘা শুকাতে বেশ সময় লেগে যায়। এর পরও
দাগ রয়ে গেছে।
নুসরাত বলেন, ‘সুন্দর দেখানোর জন্য হাতে সুন্দর
করে নকশা করে মেহেদির রং দিয়েছিলাম। কিন্তু ওই মেহেদির বিষাক্ত কেমিক্যালে
আমার হাতটাই নষ্ট হয়ে গেল। এখন আমি সব সময় ফুল হাতার জামা পরে কিংবা রুমাল
দিয়ে হাত ঢেকে রাখতে হচ্ছে।’
কেবল সারিকা বা নুসরাত একা নন,
বাজারে বিক্রি করা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মেহেদি থেকে অনেকেরই হাত
ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অসহায় হয়ে চিকিৎসকদের কাছে ছুটে আসছেন এমন অনেকেই।
বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা.
সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, মাঝেমধ্যেই মেহেদিতে হাত
ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া রোগী আসে চিকিৎসা নিতে। যাদের বেশির ভাগই অল্প বয়সী মেয়ে।
তাদের কেস স্ট্যাডি নিয়ে জানা যায়, বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের
মেহেদি ব্যবহারের ফলে এমনটা হয়েছে।
ওই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন,
‘সরাসরি মেহেদি গাছ থেকে পাতা সংগ্রহ করে যারা নিজেরা মেহেদি ব্যবহার করে
তাদের এ ধরনের ক্ষতির ঝুঁকি থাকে না। কিন্তু বাজারে নকল ও ভেজাল অনেক টিউব
মেহেদি বেচা-কেনা হয়। এসবের মধ্যে অনেক ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক মেহেদির
লেশমাত্র থাকে না, বরং বিষাক্ত নানা রাসায়নিক রং দিয়ে এই মেহেদি তৈরি করে
বাজারজাত করা হয়। এগুলোর মধ্যে এসিড জাতীয় ক্ষতিকর উপাদান থাকে, যা মানুষের
ত্বক ঝলসে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। তবে বাজারের সব মেহেদি ব্র্যান্ডই যে
বিষাক্ত বা ক্ষতিকর তা ঢালাওভাবে বলা যাবে না। গত বৃহস্পতিবার ঢাকার কাছে
কেরানীগঞ্জে একটি ভেজাল ও নকল মেহেদি তৈরির কারখানায় অভিযান চালায় র্যাবের
বিশেষ টিম। এ সময় ওই কারখানা থেকে পাকিস্তানি হেনা হারবাল মেহেদি তৈরির
নানা কেমিক্যাল ও সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
র্যাব সদর দপ্তরের
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার পাশা জানান, কেরানীগঞ্জের ওই কম্পানিতে
এগুলো তৈরি হলেও প্যাকেটের গায়ে হিন্দি ও উর্দু লেখা লিখে তা বাজারজাত করা
হতো। এসব মেহেদিতে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় তা পরীক্ষার জন্য
ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।
ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, একবারে পুরো হাত বা
নির্দিষ্ট নকশা ধরে মেহেদি না লাগিয়ে শুরুতে সামান্য একটু মেহেদি কোথাও
লাগিয়ে স্কিন টেস্ট করা যেতে পারে। যদিও এ ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক কোনো
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখতে না-ও পাওয়া যেতে পারে। অনেকের স্কিনে তাৎক্ষণিক
ক্ষতির লক্ষ্মণ দেখা দিলেও, অনেকেরই ধীরে ধীরে কিংবা কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক
দিন পরেও ক্ষতি হতে পারে। তাই মেহেদি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক ও সচেতন
থাকা খুবই জরুরি। এ ছাড়া যাদের ত্বকে এলার্জির সমস্যা আছে তাদেরও মেহেদি
পরিহার করা উচিত।
No comments:
Post a Comment