১৫ কোটি টাকার লোকসান জেনেও দেশের হয়ে খেলবেন সাকিব!
তারপরও সবাই সাকিবের দেশ প্রেম নিয়ে প্রশ্ন তুলেই যাচ্ছেন একবারের জন্যও কেউ ভাবছে না এই সে সাকিব যে আনুমানিক ১৫ কোটি টাকার লোকসানের মুখে পড়েও কেবল দেশের টানেই সেসব নিয়ে ভাবছেন না। যারা হলদে মিডিয়ার প্ররোচনায় সাকিবের মন্ডুপাত করেই চলেছেন একবার ভেবে দেখুন ২০১৩ আইপিলে সাকিবের পারফরম্যান্স মূল্য ছিলো প্রায় ১০ কোটি টাকা। দলকে শিরোপা জেতাতে তার পারফরম্যান্সকে সবাই বড় করে দেখছে। নিশ্চিতভাবেই আসছে মৌসুমে তাকে বড় অংকের টাকা দিয়ে হলেও ধরে রাখতে চাইবে। সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনায় অংকটা ১০ কোটি টাকার কম হওয়ার কথা নয়।
সাথে দেশের মাটিতে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ, ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ, ইংলিশ কাউন্টি, বিগ ব্যাশ, শ্রীলঙ্কান প্রিমিয়ার লিগ- সব মিলিয়ে আগামী দেড় বছরে বিভিন্ন লিগে নিষেধাজ্ঞার কারণে অন্তত পক্ষে ১৫ কোটি টাকার লোকসানের মুখোমুখি মিস্টার অল রাউন্ডার সাকিব আল হাসান। সবকিছু জেনেই দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকেই রবিবার শাস্তির বিরোদ্ধে আপিল করেছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। কারণটাও সবার জানা দেশের হয়ে আরও ১০ বছর খেলতে চান সাকিব। সেখানে ১৫ কোটি টাকার চেয়ে দেশপ্রেমই উর্ধ্বে। এখন দেখার বিষয় আপিলে শাস্তি কতটা কমে। তবে বিসিবি প্রেসিডেন্ট আগেই জানিয়ে দিয়েছে শাস্তি কমানো হলেও সেটা খুব বেশি কমানো হবে না। এদিকে রবিবার বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দীন চৌধূরী সুজন বলেছেন আপিলের রায় ঈদের অগের হতে পারে আবার পরেও হতে পারে। কি হবে আপিলের রায়? দেশের ভেতরে ৬ মাসের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার? তাহলে হয়ত ডিপিএল বিপিএল খেলতে পারবেন। কিন্তু দেশের বাইরে ১৮ মাসের সাজা বহাল থাকলে ঠিকই আইপিএল, চ্যাস্পিয়ন্স লিগ, সিপিএল, বিগ ব্যাশ, কাউন্টিতে খেলতে পারবেন না। যার অর্থ দাঁড়ায় নিশ্চিতভাবেই ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকার লোকসান। সাকিব যদি এই লোকসান হাসি মুখে মেনে নিয়ে খেলেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই তার দেশপ্রেম সবার কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
কিন্তু এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি হতে পারে জানেন? প্রতিযোগিতার এই ক্রিকেট বিশ্বের মানি লিগগুলোতেই আর খেলার সুযোগ না পেতে পারেন। কারণ একটা মৌসুম কোনো দলে খেলতে না পারা মানে পরের মৌসুমে আপনি শতভাগ অনিশ্চিত। দেশের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে দেশের বাইরের বড় বড় লিগগুলোতে একমাত্র সাকিবই দাপটের সাথে খেলে আসছিলেন। সেখানে ছেদ পড়লে বিসিবি কি এর দায় নেবে? কখনোই না কারণ নেবে না বলেই তো এধরনের প্রতিহিংসামূলক শাস্তি দিয়েছে বিসিবি।
বাংলাদেশ ক্রিকটে বোর্ডর কোড অব কন্ডাক্টোর কোন ধারায় লিখা আছে ডেসিংরুম থেকে অনুমতি না নিয়ে বাইরে গেলে ১৮ মাস দেশের বাইরের লিগে খেলতে পারবে না? ঘটনাটাটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ চলাকালে। তাই শাস্তি যদি হয় তাহলে আন্তর্জাতিক ম্যাচ থেকে কয়েক ম্যাচর জন্য নির্দিষ্টভাবে নিষিদ্ধ হবেন। কিসের কি অনেকটা সাজানো নাটকের মতো দেশের মাটিতে ৬ মাস। বিদেশের মাটিতে ১৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা। কারণ দেশের বাইরের কোটি টাকার অর্থকরি লিগগুলোতে সাকিবকে খেলতে না দেওয়া। ম্যাচ চলাকালে সেদিনের ঘটনায় ডেসিং রুম থেকে বাইরে যাওয়ায় সাকিবের যদি শাস্তি হতে পারে তাহলে টিম ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা খালেদ মাহমুদ সুজনের কেন নয়? কারণ তিনি দায়িত্ব পালন কালে একজন ক্রিকেটার কিভাবে ড্রেসিংরুমের বাইরে যান? এখানে খালেদ মাহমুদ সুজন আত্মপক্ষ সমর্থ করতেই পারেন। তিনি হয়ত বলবেন সাকিব বেপরোয়, তাকে নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হয়নি। তাহলে ঐ ঘটনার পরপরই কেন সাকিবের বিরোদ্ধে অভিযোগ তুললেন না? কারণ নাটক সাজাতেও তো সময় দরকার।
সাকিবের শাস্তি দেখে মনে হচ্ছে মাথা ব্যাথার কারণে মাথাই কেটে ফেলার অপচিন্তা।২০০৭-০৮ মৌসুমে ইংল্যান্ডের কাউন্ট্রি দল থেকে সাকিবকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিলো তাদের দলের হয়ে খেলার জন্য। কিন্তু এই জন্য তাকে জাতীয় দল থেকে অবসর নিতে হত। তাই সাকিব জাতীয় দলকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাউন্ট্রি দলের প্রস্তাব প্রত্যাখান করেছিলো। আমি হলফ করে বলত. ইংল্যান্ডের প্রস্তাবের কথা নিশ্চয়ই সবারই জানা আছে। কেবল দেশপ্রেমের বলেই ইংল্যান্ডের মতো একটা দেশের হয়ে খেলার প্রস্তাব হাসিমুখে ফিরিয়ে দেওয়া যায়। তারপরও সবাই বলছে সাকিবের কিনা দেশ প্রেম নেই! একজন ক্রিকেটারের ব্যাক্তিগত জীবনে সমস্যা থাকতেই পারে। তাই বলে লঘু অপরাধে এত বড় শাস্তি? গোপন সূত্রের খবরে জানা গেছে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে অনেকটা পূর্ব পরিকল্পনা থেকেই সাকিবকে এত বড় শাস্তি দিয়েছে বিসিবি। যে দেশের ক্রিকেট বোর্ডের কোনো শৃঙ্খলা নেই সেই দেশের ক্রিকেট বোর্ডের এত ক্ষমতা?
যে দেশের ক্রিকেট বোর্ড দেশের ঘরোয়া লিগ আয়োজন করতে গিয়ে ক্লাবের কাছে নতজানু হয়ে ৭ বার তারিখ পাল্টায় সে দেশের ক্রিকেট বোর্ডের এত ক্ষমতা? যে দেশের ক্রিকেট বোর্ডে বোর্ড ডিরেক্টর থেকেও কেউ ক্লাবের কোচের দায়িত্ব পালন করতে পারে সেখানে শৃঙ্খলার এত কড়াকড়ি? সাকিব আল হাসানকে যে অপরাধে শাস্তি প্রদান করেছে সে অপরাধে আকরাম খানও তো অপরাধি? আকরাম খান কিভাবে সাকিবকে এনওসি প্রসঙ্গে মৌখিক অনুমতি দিলেন? কই আকরাম খানের তো বোর্ড ডিরেক্টর পদ চলে যায় নি? আপনি যদি কাউকে শাস্তি দেওয়ার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর থাকেন তাহলে তার হাজারো সমস্যা খুঁজে পাবেন। সাকিবের বেলায় হয়েছে সেটাই। তারপরও সাকিব ঠান্ডা মাথায় একটা শব্দও করেনি। অনেকে আশংকা করা শুরু করে দিয়েছিলেন ১০/১৫ কোটি টাকার লোকসান হবে সাকিব বোধয় এবার সত্যি সত্যিই অবসর নিয়ে নিবেন। কই সাকিব তো অবসর নেননি? সমালোচকদের চোখে সাকিবের এই আত্মত্যাগ কোনোদিনই চোখে পড়বে না। কারণ যাকে আপনি হিংসা করবেন তাকে যেকোনো ভাবেই হউক না কেন তার চলার পথে আপনি কাটা দিবেনই।
No comments:
Post a Comment