ইউক্রেন : রাশিয়ার মুখের হাসি এখন ম্লান
ইউক্রেন সঙ্কট চলছে গত বছর থেকে। চরমে ওঠে গত ফেব্রুয়ারি-মার্চে।
প্রথমে প্রচণ্ড গণ-আন্দোলনে রুশপন্থী প্রেসিডেন্টের পলায়ন। এরপর ক্রিমিয়া
কৌশলে কব্জা করে নিলো পাশের ‘ঘড়েল মোড়ল’ রাশিয়া। একই সাথে পূর্ব
ইউক্রেনজুড়ে রুশপন্থীদের তাণ্ডবে সরকার অসহায়। মনে হচ্ছিল শুধু ক্রিমিয়াই
নয়, দেশটার পূর্বাংশ এবং দক্ষিণাঞ্চলে ওডেসা বন্দরসহ অনেকটাই হারাতে বসেছে
ইউক্রেন। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে কিয়েভ প্রশাসন পরিস্থিতি অনেকটা সামলে
নিয়েছে। গৃহযুদ্ধের মহাঝুঁকি নিয়ে পূর্বাঞ্চলে রুশপন্থীদের দমানো হচ্ছে
কঠোরহস্তে। অনেক বিদ্রোহী নিহত হয়েছে। অবশ্য হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে মারা
গেছেন এক ইউক্রেনীয় জেনারেল। তবে যতটা খবর এসেছে মিডিয়ায়, রুশভাষী
মস্কোপন্থী বিদ্রোহীদের কবল থেকে অধিকাংশ এলাকা উদ্ধার করা হয়েছে বলে মনে
হয়। আরেক বড় সাফল্য হলো, এমন চরম অস্থিতিশীল ও উত্তেজনাময় পরিস্থিতিতেও
ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সম্পন্ন করে ফেলেছে। এটা কিন্তু
গৃহযুদ্ধকবলিত সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশারের মতো ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করা কিংবা
ভোটের নামে প্রহসনের নির্বাচন ছিল না। ইউক্রেন পরিস্থিতির মোড় ফেরার লক্ষণ
যতটা দেখা গেছে ইতোমধ্যে, তাতে ভাষ্যকাররা মনে করছেনÑ রাশিয়া ফায়দা যতটা
তোলার তুলে নিয়েছে, এখন আর সুবিধা করতে পারবে না।
এ দিকে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মাঝে আয়োজিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক নিষ্ফল হয়েছে। ৯ জুন ব্রাসেলসে আহূত এই বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নও শামিল হয়। ইউক্রেনের কাছে গ্যাস বিক্রি বাবদ রাশিয়ার পাওনা আদায়ই ছিল আলোচ্য বিষয়। ২০১৩ সাল এবং চলতি বছর এপ্রিল পর্যন্ত জ্বালানি গ্যাস খাতে ইউক্রেনের বকেয়া ২২০ কোটি ডলার এবং অর্থনৈতিক দুর্দশা সত্ত্বেও দেশটি জুনের প্রথম দিকে ৭৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার শোধ করেছে। এ দিকে ইউক্রেন বলেছেÑ রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গ্যাস কোম্পানি গ্যাজপমের কাছে তার দেনা ১৪৫ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার। এটা পরিশোধের শেষ তারিখ ১০ জুন আগে থেকেই নির্ধারিত। এপ্রিল-মে মাসের হিসাব মোতাবেক নতুন দেনা যোগ হয়েছে আরো ৫০ কোটি ডলার। অপর দিকে গ্যাজপম ইউক্রেনের কাছে পাওনার পরিমাণ দেখিয়েছে তিন গুণেরও বেশি। তার হিসাবমাফিক, ইউক্রেনের বকেয়া ৪৪৬ কোটি ডলার এবং মাসে মাসে এ দেনা বাড়ছে এক শ’ কোটি ডলার।
যে দিন রাশিয়া-ইউক্রেন-ইইউ বৈঠকটি ব্যর্থ হয়ে যায়, সে দিনই রাশিয়ার পশ্চিম সীমান্তে লাটভিয়ায় মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর ১২ দিনব্যাপী মহড়া শুরু হয় বড় আকারে। এতে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ব্রিটেনসহ ১০ দেশের ৫ হাজার সৈন্য এবং ৮ শ’ যুদ্ধযান অংশ নিয়েছে। পরমাণু বোমা বহনে সক্ষম বি-৫২ স্টিলথ বোমারু বিমানও এই মহড়ায় অংশ নেয়ার কথা। ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার সাথে আমেরিকাসহ পাশ্চাত্যের চরম বিরোধের প্রেক্ষাপটে ন্যাটোর মহড়াটি তাৎপর্যপূর্ণ। মস্কো এটা উপলব্ধি করেছে বলেই এই মহড়াকে ন্যাটোর ‘আগ্রাসনের আলামত’ বলেছে। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের মতে, এটি উসকানিমূলক।
রাশিয়া ইউক্রেনের নবনির্বাচিত সরকারকে না মেনে উপায় নেই যতই এ নির্বাচনকে সে অবৈধ বলুক। এর আগের অস্থায়ী সরকারকেও তারা অবৈধ বলেছিলেন। অথচ তা গঠন করতে হয়েছিল রুশপন্থী প্রেসিডেন্ট ইয়ানুকোভিচ ২০০৪ সালের সংবিধান পুনর্বহালের ওয়াদা ভঙ্গ করার পর ২২ ফেব্রুয়ারি পালিয়ে যাওয়ার কারণে। সংবিধান মোতাবেক এরপর পার্লামেন্ট চেয়ারম্যান অস্থায়ীভাবে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নেন। এর ধারাবাহিকতায় সব বড় দলের সমর্থনে আর্সেনি ইয়াতসেনইউককে প্রধানমন্ত্রী করে গঠিত হলো অন্তর্বর্তী সরকার। এর অধীনে ২৫ মে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। অথচ রাশিয়া বলেছিল অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ইয়ানুকোভিচের পতন ডেকে আনা হয়েছে।
লক্ষণীয় হলো, মস্কোর মদদে রুশপন্থীরা বারবার পূর্ব ইউক্রেনে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সরকারি ভবন জবরদখল করেছিল। কিন্তু রাজধানী কিয়েভে একটি ভবনও দখল করেনি রুশপন্থী ইয়ানুকোভিচ-বিরোধী জনতা। ইউক্রেনের রাজধানীতে ক্ষমতার পালাবদলে ‘চরম ডানপন্থীদের’ নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগ করেছে রাশিয়া। আসলে তারা জনতার একটি অপ্রধান অংশ ছিল। কৌতুহলের ব্যাপার হলো, ইউক্রেন সম্পর্কে রাশিয়ার আগ্রাসী নীতিকে সমর্থন দিয়েছে চরম দক্ষিণপন্থী ‘ইউরোপীয় জাতীয় আন্দোলন মোর্চা।’
রাশিয়া ইউক্রেনের সংখ্যালঘু রুশ জনগোষ্ঠীকে রক্ষার জন্য ক্রিমিয়া করায়ত্ত করা এবং পূর্ণ ইউক্রেনে হস্তক্ষেপ প্রয়োজন ছিল বলে দাবি করেছে। অনেকে বলছেন, ১৯৩৮ সালে একই অজুহাতে হিটলার দখল করেছিলেন চেকোস্লোভাকিয়া। বলা হয়েছিল, সংখ্যালঘু জার্মানদের অধিকার নিশ্চিত করতে এটা করা হয়েছে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, পূর্ব ইউক্রেনের গৃহযুদ্ধে ও সহিংসতায় রাশিয়া সংশ্লিষ্ট নয় বলে দাবি করছে, যদিও এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। ক্রিমিয়ার গোলযোগের ক্ষেত্রেও রাশিয়া প্রথমে সাধু সাজতে চেয়েছে। পরে খোদ প্রেসিডেন্ট পুতিন স্বীকার করলেন এর নেপথ্যে রুশ ভূমিকার কথা।
রাশিয়া ক্রিমিয়া কুক্ষিগত করেছে খোঁড়া যুক্তি দিয়ে, আন্তর্জাতিক আইন কানুন লঙ্ঘন করে, নিছক গায়ের জোরে। এসব কিছুর লক্ষ্য ক্রিমিয়ায় তার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি বজায় রেখে কৃষ্ণসাগর অঞ্চলে আধিপত্য টিকিয়ে রাখা। এভাবে মস্কো চায় ন্যাটোর পূর্বমুখী বিস্তারে বাধা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে চাপে রাখতে। এবার পুতিন প্রমাণ করেছেন, সাবেক সোভিয়েত আমলের ‘প্রজাতন্ত্র’গুলোকে বর্তমান রাশিয়াও মনে করে তার করদরাজ্যের মতো। একই সাথে জার আমলের সামন্তবাদী প্রভুত্বের মানসিকতাও আধুনিক ক্রেমলিন ত্যাগ করতে পারেনি। ফলে স্বাধীন ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার নগ্ন লঙ্ঘনে রাশিয়া কোনো দ্বিধা করে না।
ক্রিমিয়ায় রুশপন্থীরা করেছে গণভোট প্রহসনের প্রতারণা। আর পূর্ব ইউক্রেনে পরিকল্পিত সহিংসতার তাণ্ডব। ক্রিমিয়া রুশভাষী অধ্যুষিত হলেও গণভোটে মাত্র ৩৪ শতাংশ ভোটার যোগ দেয়। অথচ রাশিয়ার গালভরা দাবিÑ ৮৩ ভাগ মানুষ এতে অংশ নিয়েছে যাদের ৯৭ ভাগ নাকি চেয়েছে ইউক্রেন থেকে বিচ্ছিন্নতা। ধর্মের ঢোল আপনা বাজে। খোদ ‘রাশিয়ান প্রেসিডেনসিয়াল কাউন্সিল ফর সিভিল সোসাইটি অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস জানায়, ক্রিমিয়ায় গণভোটে বড়জোর ৫০ শতাংশ মানুষ অংশ নিয়েছে যাদের মাত্র অর্ধেক রায় দিয়েছে ইউক্রেন থেকে আলাদা হওয়ার পক্ষে।
এ তো গেল ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলের উপাখ্যান। দেশটার পূর্বাংশে বেশ ক’ সপ্তাহ যাবৎ রুশভাষী মস্কোপন্থী বিদ্রোহীরা মস্কোর নির্দেশনায় ভয়াবহ সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের রাজত্ব কায়েম রেখেছিল। বড় বড় শহরে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অফিস দখল করেছিল ওরা। সেই সাথে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে শুধু হুমকি বা অপপ্রচার নয়; তারা হামলা, হত্যা, আটক, নির্যাতন, জিম্মি রাখা, প্রভৃতি অপরাধের শিকার হয়েছে রুশপন্থীদের হাতে। বিদ্রোহীরা বেশ ক’টি বড় অপারেশনে ইউক্রেনের অনেক সৈন্য হত্যা করেছে। তবে ইদানীং পাল্টা হামলায় রুশপন্থীরা দলে দলে মারা পড়ছে।
ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছে, It is ready to defend itself even against the Nuclear-armed power that brutally trampled upon its bislateral and international obligations. (ইউক্রেন নিজেকে রক্ষা করতে প্রস্তুত; এমনকি পারমাণবিক শক্তিধর সে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেও যারা নিজেদের দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা নির্মমভাবে মাড়িয়েছে)।
এ দিকে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মাঝে আয়োজিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক নিষ্ফল হয়েছে। ৯ জুন ব্রাসেলসে আহূত এই বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নও শামিল হয়। ইউক্রেনের কাছে গ্যাস বিক্রি বাবদ রাশিয়ার পাওনা আদায়ই ছিল আলোচ্য বিষয়। ২০১৩ সাল এবং চলতি বছর এপ্রিল পর্যন্ত জ্বালানি গ্যাস খাতে ইউক্রেনের বকেয়া ২২০ কোটি ডলার এবং অর্থনৈতিক দুর্দশা সত্ত্বেও দেশটি জুনের প্রথম দিকে ৭৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার শোধ করেছে। এ দিকে ইউক্রেন বলেছেÑ রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গ্যাস কোম্পানি গ্যাজপমের কাছে তার দেনা ১৪৫ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার। এটা পরিশোধের শেষ তারিখ ১০ জুন আগে থেকেই নির্ধারিত। এপ্রিল-মে মাসের হিসাব মোতাবেক নতুন দেনা যোগ হয়েছে আরো ৫০ কোটি ডলার। অপর দিকে গ্যাজপম ইউক্রেনের কাছে পাওনার পরিমাণ দেখিয়েছে তিন গুণেরও বেশি। তার হিসাবমাফিক, ইউক্রেনের বকেয়া ৪৪৬ কোটি ডলার এবং মাসে মাসে এ দেনা বাড়ছে এক শ’ কোটি ডলার।
যে দিন রাশিয়া-ইউক্রেন-ইইউ বৈঠকটি ব্যর্থ হয়ে যায়, সে দিনই রাশিয়ার পশ্চিম সীমান্তে লাটভিয়ায় মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর ১২ দিনব্যাপী মহড়া শুরু হয় বড় আকারে। এতে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ব্রিটেনসহ ১০ দেশের ৫ হাজার সৈন্য এবং ৮ শ’ যুদ্ধযান অংশ নিয়েছে। পরমাণু বোমা বহনে সক্ষম বি-৫২ স্টিলথ বোমারু বিমানও এই মহড়ায় অংশ নেয়ার কথা। ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার সাথে আমেরিকাসহ পাশ্চাত্যের চরম বিরোধের প্রেক্ষাপটে ন্যাটোর মহড়াটি তাৎপর্যপূর্ণ। মস্কো এটা উপলব্ধি করেছে বলেই এই মহড়াকে ন্যাটোর ‘আগ্রাসনের আলামত’ বলেছে। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের মতে, এটি উসকানিমূলক।
রাশিয়া ইউক্রেনের নবনির্বাচিত সরকারকে না মেনে উপায় নেই যতই এ নির্বাচনকে সে অবৈধ বলুক। এর আগের অস্থায়ী সরকারকেও তারা অবৈধ বলেছিলেন। অথচ তা গঠন করতে হয়েছিল রুশপন্থী প্রেসিডেন্ট ইয়ানুকোভিচ ২০০৪ সালের সংবিধান পুনর্বহালের ওয়াদা ভঙ্গ করার পর ২২ ফেব্রুয়ারি পালিয়ে যাওয়ার কারণে। সংবিধান মোতাবেক এরপর পার্লামেন্ট চেয়ারম্যান অস্থায়ীভাবে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নেন। এর ধারাবাহিকতায় সব বড় দলের সমর্থনে আর্সেনি ইয়াতসেনইউককে প্রধানমন্ত্রী করে গঠিত হলো অন্তর্বর্তী সরকার। এর অধীনে ২৫ মে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। অথচ রাশিয়া বলেছিল অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ইয়ানুকোভিচের পতন ডেকে আনা হয়েছে।
লক্ষণীয় হলো, মস্কোর মদদে রুশপন্থীরা বারবার পূর্ব ইউক্রেনে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সরকারি ভবন জবরদখল করেছিল। কিন্তু রাজধানী কিয়েভে একটি ভবনও দখল করেনি রুশপন্থী ইয়ানুকোভিচ-বিরোধী জনতা। ইউক্রেনের রাজধানীতে ক্ষমতার পালাবদলে ‘চরম ডানপন্থীদের’ নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগ করেছে রাশিয়া। আসলে তারা জনতার একটি অপ্রধান অংশ ছিল। কৌতুহলের ব্যাপার হলো, ইউক্রেন সম্পর্কে রাশিয়ার আগ্রাসী নীতিকে সমর্থন দিয়েছে চরম দক্ষিণপন্থী ‘ইউরোপীয় জাতীয় আন্দোলন মোর্চা।’
রাশিয়া ইউক্রেনের সংখ্যালঘু রুশ জনগোষ্ঠীকে রক্ষার জন্য ক্রিমিয়া করায়ত্ত করা এবং পূর্ণ ইউক্রেনে হস্তক্ষেপ প্রয়োজন ছিল বলে দাবি করেছে। অনেকে বলছেন, ১৯৩৮ সালে একই অজুহাতে হিটলার দখল করেছিলেন চেকোস্লোভাকিয়া। বলা হয়েছিল, সংখ্যালঘু জার্মানদের অধিকার নিশ্চিত করতে এটা করা হয়েছে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, পূর্ব ইউক্রেনের গৃহযুদ্ধে ও সহিংসতায় রাশিয়া সংশ্লিষ্ট নয় বলে দাবি করছে, যদিও এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। ক্রিমিয়ার গোলযোগের ক্ষেত্রেও রাশিয়া প্রথমে সাধু সাজতে চেয়েছে। পরে খোদ প্রেসিডেন্ট পুতিন স্বীকার করলেন এর নেপথ্যে রুশ ভূমিকার কথা।
রাশিয়া ক্রিমিয়া কুক্ষিগত করেছে খোঁড়া যুক্তি দিয়ে, আন্তর্জাতিক আইন কানুন লঙ্ঘন করে, নিছক গায়ের জোরে। এসব কিছুর লক্ষ্য ক্রিমিয়ায় তার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি বজায় রেখে কৃষ্ণসাগর অঞ্চলে আধিপত্য টিকিয়ে রাখা। এভাবে মস্কো চায় ন্যাটোর পূর্বমুখী বিস্তারে বাধা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে চাপে রাখতে। এবার পুতিন প্রমাণ করেছেন, সাবেক সোভিয়েত আমলের ‘প্রজাতন্ত্র’গুলোকে বর্তমান রাশিয়াও মনে করে তার করদরাজ্যের মতো। একই সাথে জার আমলের সামন্তবাদী প্রভুত্বের মানসিকতাও আধুনিক ক্রেমলিন ত্যাগ করতে পারেনি। ফলে স্বাধীন ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার নগ্ন লঙ্ঘনে রাশিয়া কোনো দ্বিধা করে না।
ক্রিমিয়ায় রুশপন্থীরা করেছে গণভোট প্রহসনের প্রতারণা। আর পূর্ব ইউক্রেনে পরিকল্পিত সহিংসতার তাণ্ডব। ক্রিমিয়া রুশভাষী অধ্যুষিত হলেও গণভোটে মাত্র ৩৪ শতাংশ ভোটার যোগ দেয়। অথচ রাশিয়ার গালভরা দাবিÑ ৮৩ ভাগ মানুষ এতে অংশ নিয়েছে যাদের ৯৭ ভাগ নাকি চেয়েছে ইউক্রেন থেকে বিচ্ছিন্নতা। ধর্মের ঢোল আপনা বাজে। খোদ ‘রাশিয়ান প্রেসিডেনসিয়াল কাউন্সিল ফর সিভিল সোসাইটি অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস জানায়, ক্রিমিয়ায় গণভোটে বড়জোর ৫০ শতাংশ মানুষ অংশ নিয়েছে যাদের মাত্র অর্ধেক রায় দিয়েছে ইউক্রেন থেকে আলাদা হওয়ার পক্ষে।
এ তো গেল ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলের উপাখ্যান। দেশটার পূর্বাংশে বেশ ক’ সপ্তাহ যাবৎ রুশভাষী মস্কোপন্থী বিদ্রোহীরা মস্কোর নির্দেশনায় ভয়াবহ সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের রাজত্ব কায়েম রেখেছিল। বড় বড় শহরে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অফিস দখল করেছিল ওরা। সেই সাথে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে শুধু হুমকি বা অপপ্রচার নয়; তারা হামলা, হত্যা, আটক, নির্যাতন, জিম্মি রাখা, প্রভৃতি অপরাধের শিকার হয়েছে রুশপন্থীদের হাতে। বিদ্রোহীরা বেশ ক’টি বড় অপারেশনে ইউক্রেনের অনেক সৈন্য হত্যা করেছে। তবে ইদানীং পাল্টা হামলায় রুশপন্থীরা দলে দলে মারা পড়ছে।
ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছে, It is ready to defend itself even against the Nuclear-armed power that brutally trampled upon its bislateral and international obligations. (ইউক্রেন নিজেকে রক্ষা করতে প্রস্তুত; এমনকি পারমাণবিক শক্তিধর সে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেও যারা নিজেদের দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা নির্মমভাবে মাড়িয়েছে)।